জলাশয়
|
---|
সামুদ্রিক
|
অন্তর্দেশীয়
|
সমুদ্র উপকূলবর্তী
|
সমুদ্র
|
মিঠে জল
|
অর্ধ নোনা জল
|
ডিমারসাল(৫ মিটারের নীচে)
|
পেলাডিক্স(৫ মিটারের উপরে)
|
খাড়ি
|
ভেড়ি
|
|
|
নদী
|
হ্রদ, খাল, বিল
|
দিঘি, পুকুর ডোবা
|
অ্যাকোয়ারিয়াম
|
প্রজনন পুকুর
|
ডিম ফোটানো পুকুর
|
আঁতুড় পুকুর
|
প্রতিপালন পুকুর
|
সামুদ্রিক
মানুষ সেই আদিম কাল থেক তার উদর পূর্তির জন্য মাছ শিকার করে আসছে। অন্য ক্ষেত্রে মাছের প্রতিপালন ও চাষ করলেও লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য সামুদ্রিক মাছ শিকার করে। যুগ যুগ ধরে বিশাল এই জলাশয় থেকে মাছ আমরা ধরেই চলেছি। এই শিকার ও পরবর্তীতে তা গুদাম জাত করা, সদ্য সদ্য খাওয়া ছাড়াও সেগুলো সংরক্ষণ ও বাজার জাত করা ইত্যাদি কাজে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয় এবং এর ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে এর বিরাট ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সামুদ্রিক মাছ শিকারে বাধানিষেধ
সামুদ্রিক মাছ শিকার করা হয়। আজ পর্যন্ত তাদের প্রতিপালন করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। কিন্তু এই বিশাল প্রাকৃতিক ভাণ্ডার থেকে মাছের জোগানে যাতে কোনও দিন ঘাটতি না পড়ে তার জন্য মানুষের হাতে এদের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে মাছের মোট জোগান যেখানে প্রতি বছর ১৬ লক্ষ তন, সেখানে সামুদ্রিক মাছের জোগান মাত্র ৩ লক্ষ টন। এবং এই জোগানও প্রতি বছর উত্তরোত্তর কমছে। যে হেতু আমরা সামুদ্রিক মাছ প্রতিপালন বা সৃষ্টি করতে পারি না, তাই এই ঘাটতি কমানোর দাওয়াই হিসাবে এর ফলন বাড়ানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু আমদের দায়িত্ব অনেক। এই মাছের জোগান উত্তরোত্তর কমার বহু কারণ। কিন্তু যেগুলোর জন্য আমরা সরাসরি দায়ী, সেগুলো সবিশেষ উল্লেখযোগ্য
- (১) যথেচ্ছ মাছ শিকার : আমরা ভবিষ্যতের কথা মনে না রেখে বিনা বিচারে সব মাছ ধরে নিই। এই প্রক্রিয়ায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়। যে সব জাতের মাছ সমুদ্রে বসবাস করে, কিন্তু ডিম পাড়ার জন্য নদীতে আসে, তাদের ক্ষেত্রে মনে রাখা উচিত
- (১) নদীতে আসার পথে তাদের কোনও মতেই শিকার করা চলবে না;
- (২) ডিম ছাড়ার পরে সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার পথে ধরা যেতে পারে;
- (৩) ডিমওয়ালা মাছ ধরা অপরাধ;
- (৪) এই ধরনের মাছ ছোট অবস্থাতেও ধরা চলবে না, সমুদ্রে ফেরার পর এদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনচক্র চলতে দিতে হবে;
- (৫) ডিম পাড়ার জন্য মিঠে জলে নিয়ে আসার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে এবং
- (৬) নদনদী যাতে দূষিত না হয়, অগভীর না হয়, পরিমাণমতো জল ও তার উপযুক্ত স্রোত যাতে বজায় থাকে তার জন্য আমাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। কারণ নদনদীর গভীরতা, জলস্রোত, জলের নির্মলতা ইত্যাদির উপর বহুলাংশে এদের নদীতে আসা নির্ভর করে। প্রয়োজনে আইন করে ডিমওয়ালা বা বাচ্চা মাছ এবং অসময়ে মাছ ধরা বন্ধ করতে হবে।
- ২) সমুদ্র দূষণের হাত থেকে সমুদ্র বাঁচানো : সমুদ্রকে দূষণের হাত থেকে বাঁচানোর যথা সম্ভব চেষ্টা করতে হবে। উত্পাদিত সামুদ্রিক মাছের অধিকাংশই সমুদ্র থেকে ধরা হয়। নানা কারণে সমুদ্রের জলকে আমরা দূষিত করে থাকে যা মাছের বংশবিস্তার, বৃদ্ধি ও বসবাসে ব্যাঘাত ঘটায়। নানা ধরনের জলযান সমুদ্রে চলাচল করে। নানা ধরনের যন্ত্র সমুদ্রে কাজ করে। এ সবের বর্জ্য এবং স্থলভূমির বর্জ্যপদার্থ সমুদ্রের জল দূষিত করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সব বর্জ্য মাছের পক্ষে ক্ষতিকারক। এই দূষণ যতটা সম্ভব আমাদের বন্ধ করতে হবে।
সামুদ্রিক মাছ শিকার
জলের গভীরতার উপর ভিত্তি করে সাগরের মাছ শিকারকে দু’ ভাগে ভাগ করা যেতে পারে —
- (১) সমুদ্রোপকূলবর্তী : সাগরে মানুষ নানা উপায়ে মাছ শিকার করে থাকে। সাধারণ জাল দিয়ে মাছ ধরা থেকে শুরু করে নানা রকম বিশেষ ধরনের জাল বা দেশি বা উন্নত উপায়ে সমুদ্রের ৫ মিটার গভীরতাসম্পন্ন জলে মাছ ধরা এই ভাগের অন্তর্গত। যেমন – ম্যালেট, পার্চ ইত্যাদি।
- (২) গভীর সমুদ্রে মাছ ধরা : নানা উপায়ে মানুষ আরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আরও গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। যেমন ম্যাক্রেল, শার্ক ইত্যাদি।
এ ছাড়াও হ্রদ বা মোহনায় মানুষ সাধারণ উপায়ে জীবনের কম ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরে থাকে। এখানে সীমিত প্রজাতির ও অল্প পরিমাণে মাছ পাওয়া যায়।
অন্তর্দেশীয় জলাশয়
মিঠে জল
যে মাছকে বেশির ভাগ মানুষ তাদের খাদ্য হিসাবে বা তাদের জীবন ও জীবিকা হিসাবে ব্যবহার করে তার প্রায় ৪০ শতাংশ মিঠে জলের মাছ বা অন্তর্দেশীয় জলাশয়ে উত্পন্ন হয়। মাছশিকারিরা জীবনের কম ঝুঁকি নিয়ে এই সব মাছ ধরতে পারে। এদের মধ্যে কিছু কিছু মাছ ধরা হয় প্রাকৃতিক বড় জলাশয় থেকে। আর বাকি শিকার হয় মানুষের তৈরি করা ছোট জলাশয় থেকে। এই অন্তর্দেশীয় জলাশয়গুলিকে কয়েকটি শ্রেণি এবং উপ-শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন —
মিঠে জলাশয়গুলি জমানো বৃষ্টির জল, মাটির নীচের জল বা পাহাড় থেকে নেমে আসা বরফ গলা জলে সমৃদ্ধ। এই জলের মাছের জাতি-প্রজাতি ও গতিপ্রকৃতি নোনা জলের মাছের থেকে আলাদা। এ ধরনের জলাশয়কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন —
এ ধরনের জলাশয়ের আবার নানা ভাগ থাকতে পারে --- প্রজনন (ব্রিডিং) পুকুর, ডিম ফোটানোর (হ্যাচারি) পুকুর, আঁতুড় (নার্সারি) পুকুর ও প্রতিপালন (রিয়ারিং) পুকুর। এগুলো বিশেষ যত্ন নিয়ে বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি ও ব্যবহার করা হয়। এগুলো আকৃতিতে ছোট হয়। নিজেদের পছন্দের মাছের প্রজনন, তার থেকে ডিম সংগ্রহ, ডিম ফোটানো, ধানি পোনা ও ছোট পোনা এবং মাছ প্রতিপালনের জন্য তৈরি করা হয় এবং এই সব কাজের জন্য এখানে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। এখানে সাধারণত ব্যবসাভিত্তিক এবং নামি-দামী মাছের পোনা উত্পন্ন করা হয়।
- (ক) নদী : এই জলাশয় প্রাকৃতিক। প্রাকৃতিক উপায়ে এটি বৃষ্টির জল বা পাহাড়ের বরফ গলা জলে পরিপূর্ণ থাকে। নদনদীর গতিপ্রকৃতিও প্রাকৃতিক ভাবে নিয়ন্ত্রিত। মানুষ এখানে মাছ চাষ করে না। প্রাকৃতিক কারণেই এখানে মাছের ডিম পাড়া, ডিম ফোটা থেকে আরম্ভ করে তাদের জীবনচক্রের সবটাই এখানে সম্পন্ন হয়ে থাকে। মানুষের চেষ্টা ছাড়াই। মানুষ নানা উপায়ে নানা প্রয়োজনে এই মাছ ধরে খায় ও জীবন ও জীবিকার নানা কাজে লাগায়। রুই, কাতলা, মৃগেল, শোল, শাল, বোয়াল থেকে শুরু করে কৈ, মাগুর, চিংড়ি, বেলে, মৌরলা, বাটা এমনকী ইলিশ, চাঁদা ইত্যাদি মাছ এই জল থেকে মানুষ পেয়ে থাকে। অন্য ছোট জলাশয়ে প্রতিপালনের জন্য সদ্যোজাত ডিম, ধানি পোনাও এই নদনদী থেকে মেলে। নদনদী নিয়ম করে সংস্কার ও দূষণমুক্ত রাখা আমাদের কর্তব্য।
- (খ) খাল, বিল (ক্যানেল, লেক ইত্যাদি ) : মানুষ চাষবাসের মতো অন্য কাজের সঙ্গে মাছ চাষের জন্যও এইগুলো প্রাথমিক ভাবে খনন করে থাকে। মূলত, কৃষির খেতে জল সেচের ব্যবস্থার জন্যই এদের উত্পত্তি। বছরে বারো মাসেই এগুলয়য় জল থাকে। তাই এগুলোতে প্রাকৃতিক আশীর্বাদের মতোই নিয়মিত মাছ চাষ হয়ে থাকে। ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে সমবায় গঠন করেই এগুলো বেশি কাজে লাগানো হয়। এগুলোতে নামি-দামী মাছের সঙ্গে অনামি মাছও প্রচুর ইচ্ছা-অনিচ্ছায় হয়ে থাকে। এগুলো নিয়মিত ভাবে সংস্কার করা না হলেও মোটামুটি ভাবে পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত থাকে। এখানে রুই, কাতলা, মৃগেল থেকে মিষ্টি জলের সব মাছই চাষ হয়ে থাকে।
- (গ) দিঘি-পুকুর-ডোবা: এগুলো ব্যক্তি-মালিকানাভিত্তিক। এগুলো মুখ্যত তৈরিই করা হয় গ্রাম সংলগ্ন অঞ্চলে মাছ চাষের সঙ্গে সঙ্গে সমাজ ও সাংসারিক ছোটখাটো নানা উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। এই সব জলাশয়ে নিজেদের খাওয়ার সঙ্গে ছোট বড় ব্যবসা করার জন্য অনিয়মিত বা বৈজ্ঞানিক উপায়ে মাছ চাষ করে হয়ে থাকে। এখানে মুখ্যত মাছ পালনই করা হয়।
- (ঘ) রঙিন মাছের অ্যাকোয়ারিয়াম : এইগুলো কাচের ছোট বড় বাক্সের আকৃতির জলাশয়। নানা রকম, নানা ঢঙ, নানা কাঠামোর হয়ে থাকে এগুলো। এর ভিতরে রঙিন মাছ রাখা হয়। বাড়ির শোভা বৃদ্ধি বা কোনও স্থানকে বেশি আকর্ষণীয় করার জন্য এগুলো স্থাপন করা হয় এবং এর ভিতর দৃষ্টিনন্দন নানা মাছ রেখে দেওয়া হয়।
অর্ধ নোনা
সমুদ্র অঞ্চলে সমুদ্রের নোনা জল ও বৃষ্টির জল মিশে থাকে এই জলাশয়গুলোতে। এখানে নোনা জলের মাছই মুখ্যত থাকে কিন্তু সেখানে গভীর সমুদ্রের মাছ, খুব বড় মাছ বা অতি নোনা জলের মাছ থাকে না। সাধারণত দু’ রকমের অর্ধ নোনা জলাশয় দেখা যায়
- (ক) খাড়ি : এগুলি সমুদ্র তীরবর্তী প্রাকৃতিক সৃষ্টি। সমুদ্রের কাছে নিচু জায়গা জোয়ারে প্লাবিত হয়। পরবর্তী কালে জোয়ারের জল সেখানে আবদ্ধ হয়ে একটা বিস্তীর্ণ জলাশয় সৃষ্টি করে। প্লাবন কালে যে সব মাছ জলের সঙ্গে আসে মুখ্যত সেগুলি শিকার করা হয়। সেখানে আলাদা করে কোনও মাছ চাষ করা হয় না।
- (খ) ভেড়ি : সমুদ্রের নিকটবর্তী অঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকায় লবণাক্ত মাটিতে উপযুক্ত ফসল ফলানো কঠিন। অনেক সময় মানুষ সেই সব অঞ্চলে বড় বড় পুকুরের মতো জলাশয় তৈরি করে মাছ চাষ করে। এগুলো মাছ চাষের জ্ন্যই মুখ্যত তৈরি হয় এবং এখানে ব্যবসাভিত্তিক মাছ চাষ হয়ে থাকে। এগুলো বৃষ্টির জলে সমৃদ্ধ থাকে — প্রয়োজনে পাম্পের সাহায্যে জল দেওয়া হয়। এখানে ভেটকি, তেলাপিয়া, চিংড়ি চাষ লাভজনক। সমুদ্র থেকে বেশ দূরে নিচু ধানজমিকে অনেকে ভেড়িতে পরিণত করে মাছ চাষ করছে। সেখানে রুই, কাতলা, কৈ, মাগুরের চাষ করেও বেশ লাভ করা যায়। এখানে শুধু মাছ প্রতিপালন করা হয়। ভেড়িতে প্রজনন বা ডিম ফোটার কোনও ব্যবস্থা থাকে না। এ ছাড়াও ধান জমিতে মাছের চাষ হয়। নিচু জমিতে ধান চাষের সঙ্গে সঙ্গে চলে মাছের চাষ। নিচু জমিতে ধানের মধ্যে জল অনেক দিন থাকে। এই সময় এতে জিওল মাছের চাষ খুব ভালো হয়। ধানি পোনা থেকে চারা পোনা তৈরিতেও কাজে লাগানো যায়।
ইউনিয়ন মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন।