ভুট্টার চাষের উপযুক্ততা
চাষের মৌসুম:
ভুট্টা বীজ সারা বছরই বপন করা যায়৷ তবে বাংলাদেশে সাধারণত ৩টি মৌসুমে বীজ বপন করা হয়৷ যেমন
ক) রবি ভুট্টা : নভেম্বর - ডিসেম্বর
খ) গ্রীষ্ম ভুট্টা : মার্চ - এপ্রিল (খরিফ-১)
গ) বর্ষা ভুট্টা : জুলাই-আগস্ট (খরিফ-২)
উপযুক্ত জলবায়ু:
গ্রীষ্মকালীন অর্থাৎ উষ্ণ আবহাওয়ায় (২০০ সে. হতে ২৭০ সে. তাপমাত্রায়) ভুট্টা ভালো জন্মে৷ তবে ঠাণ্ডা পরিবেশেও জন্মাবার উপযোগী ভুট্টার জাত রয়েছে৷ বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৫ হতে ৪০ ইঞ্চি অর্থাৎ ৬৩৫-১০১৫ মিলিমিটার ভুট্টা চাষের উপযোগী, তবে ১৫০-২০০ ইঞ্চি অর্থাৎ ৩৮১-৫০৮ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত অঞ্চলেও ইহা জন্মিতে পারে৷ অন্যদিকে রাশিয়ার শুষ্ক অঞ্চলে বার্ষিক ২৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতেও ভুট্টার আবাদ হয়৷ সমুদ্র সমতল হতে ১২০০০ ফুট অর্থাৎ ৪০৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু পরিবেশেও ভুট্টা জন্মাতে পারে৷
মাটির ধরন:
ভুট্টা চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি জমি ভালো৷ তবে শীতকালে চাষ করতে হলে কোনও কোনও মাঝারি নিচু জমিতেই এর চাষ করা যায়৷ পাহাড়ের ঢাল, উপত্যকা, পাদভূমিসহ ঈষৎ ক্ষারীয় জমিতেও ভুট্টা চাষ করা যায়৷
ভুট্টা চাষের জন্য দোআঁশ থেকে পলি দোআঁশ মাটি ভালো৷ মাটির অম্লমান ৬.৫ থেকে ৭.৫ উত্তম৷ সঙ্কর জাতের ভুট্টা চাষ করে অধিক ফলন পেতে হলে জমি উর্বরতা-সম্পন্ন হওয়া দরকার৷
বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় ভুট্টা চাষ করা যায়৷ তবে নিম্নলিখিত মাটি-যুক্ত এলাকাসমূহ এ কাজের জন্য ভাল৷
• দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি৷
• সেচ সুবিধা থাকলে অন্যান্য মাটি৷
• চর ও হাওড় এলাকার উঁচু পর্যায়ের মাটি যা অক্টোবর মাসে শুকিয়ে যায়৷
চাষের জন্য উপযুক্ত অঞ্চল : বাংলাদেশের সকল স্থানেই ভুট্টার চাষ করা যায়৷
জমি তৈরি পদ্ধতি:
জমিতে ৫ থেকে ৬টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে ভুট্টার জমি তৈরি করতে হয়৷ মাটির ঢেলা গুঁড়া করে মাটি ঝুরঝুরে করে মই দিয়ে জমি সমতল করতে হয়৷ জমিতে প্রয়োগ জৈব সার ইউরিয়ার অংশবিশেষ টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও দস্তা সার জমির শেষ চাষের সময় মাটির সাথে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হয়৷ জমির আগাছা মাটির সাথে এমনভাবে মিশিয়ে দিতে হয় যাতে পঁচে গিয়ে সারে পরিণত হয়৷ বড় আকারের আবর্জনা বেছে বাইরে ফেলে দিতে হয়৷ জমির জো অবস্থায় গভীরভাবে চাষ দিতে হয়৷
বীজ বপন পূর্বে করণীয়
বীজ শোধন:
বীজ বপনের আগে প্রতি কেজি বীজ ৩ গ্রাম ভিটাভেক্স ২০০ বা ৩ গ্রাম খিরাম দিয়ে শোধন করে নিলে রোগের আক্রমণ কম হয়৷ বীজ শোধনের জন্য একটা ঢাকনাওয়ালা কাঁচের, প্লাস্টিকের বা টিনের পাত্র ব্যবহার করতে হবে৷ প্রতি কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম ভিটাভেক্স-২০০ (০.৪%) পাত্রের মধ্যে নিয়ে এমনভাবে ঝাঁকাতে হবে যাতে বীজের সঙ্গে ঔষধ ভালোভাবে মিশে যায়৷ শোধিত বীজ একটি বদ্ধ পাত্রে রাখতে হবে যাতে বাতাস ঢুকতে না পারে৷
বীজ বপন
ভুট্টা বীজ সারিতে বুনতে হয়৷ সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার৷ বীজের হার প্রতি শতকে ৮০ গ্রাম৷
গোখাদ্য হিসেবে চাষ করতে হলে বীজের পরিমাণ প্রতি শতকে ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম দিতে হয়৷ বীজ রোপণের প্রতিটিতে দুটি করে বীজ দিতে হয়৷ ৫ থেকে ৮ সেন্টিমিটার গভীরে রোপণ করতে হয়৷
বীজ হার : ১২০ গ্রাম/শতক
সার ব্যবস্থাপনা
ভুট্টার পুষ্টি চাহিদা অনেক বেশি৷ এজন্য অধিক ফলন পেতে হলে ভুট্টা জমিতে সুষম সার দিতে হয়৷ ভুট্টা জমির প্রয়োজনীয় সার নিচে দেওয়া হলো৷ এছাড়া প্রতি শতক জমিতে সারের পরিমাণ ও নিচে উল্লেখ করা হলো-
সার পরিমাণ (কেজি/শতক)
রবি খরিফ
ইউরিয়া ১৩০০ গ্রাম ১০০০ গ্রাম
টিএসপি ঌ০০ গ্রাম ৭০০ গ্রাম
এমপি ৮০০ গ্রাম ৫০০ গ্রাম
জিপসাম ৭০০ গ্রাম ৬০০ গ্রাম
জিংক সালফেট ৭০০ গ্রাম ৫০০ গ্রাম
বৃক এসিড ২০ গ্রাম ২০ গ্রাম
গোবর ২০ কেজি ২০কেজি
সার প্রয়োগ পদ্ধতি:
এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি সার জমি প্রস্তুতের সময় প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়৷ বাকি ইউরিয়ার অর্ধেক বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর এবং অবশিষ্ট ইউরিয়া ৫০ থেকে ৭০ দিন পর প্রয়োগ করতে হয়৷
দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের ইউরিয়া পার্শ্ব-প্রয়োগ করতে হয়৷
সেচ ব্যবস্থাপনা:
উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পেতে হলে সেচ প্রয়োগ অত্যাবশ্যক৷
(১) প্রথম সেচ বীজ বপনের ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে (৪ থেকে ৬ পাতা পর্যায়ে)
(২) দ্বিতীয় সেচ বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে (৮ থেকে ১২ পাতা পর্যায়ে)
(৩) তৃতীয় সেচ বীজ বপনের ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে (মোচা বের হওয়া পর্যায়ে)
(৪) চতুর্থ সেচ বীজ বপনের ৮৫ থেকে ঌ৫ দিনের মধ্যে (দানা বাঁধার আগের পর্যায়ে) দিতে হয়৷
ভুট্টার ফুল ফোটা ও দানা বাঁধার সময় কোনোক্রমেই ক্ষেতে জলাবদ্ধতা হতে দেওয়া যাবে না৷
আগাছা ব্যবস্থাপনা
ভুট্টা ফসল বহু ধরনের আগাছা দ্বারা আক্রান্ত হয়৷ উচ্চ ফলন পেতে হলে ভুট্টার জমি আগাছা-মুক্ত রাখতে হয়৷ ইতোপূর্বে ধান ও গম ফসলে অনেক আগাছার বিবরণ দেওয়া হয়েছে৷ এসব আগাছা দ্বারা ভুট্টা ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ এছাড়াও ভুট্টা জমিতে অনেক আগাছা জন্মাতে পারে৷ এখানে আরও কয়েকটি আগাছার বিবরণ দেওয়া হলো৷
বথুয়া
বথুয়া একটি উল্লেখযোগ্য রবি আগাছা৷ শীতকালে সবজির জমিতেই বেশি দেখা যায়৷ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে জমিতে বথুয়ার আবির্ভাব ঘটে, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে বীজ আসে এবং মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে বীজ পরিপক্ব হয়৷
বংশ বিস্তার : বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি : বথুয়া বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা সহজে বিনষ্ট হয় না৷ হাতে তোলা, নিড়ানি, কোদলানো ও লাঙল চাষ দিয়ে সহজেই বথুয়া আগাছা দমন করা যায়৷
বন ডাটা
এটি উঁচু জমিতে বেশি জন্মে৷ ভুট্টা ক্ষেতে এই আগাছার প্রকোপ খুব একটা কম নয়৷
দমন:
বন ডাটা ও কাঁটানটে নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি নিম্নরূপ হতে পারে:
• যেসব জমি এই আগাছা দ্বারা আক্রান্ত হয় সেসব জমিতে আগাছ বীজের অঙ্কুরোদগম তরান্বিত করার জন্য কয়েকবার রবি ঋতুতে চাষ দেয়া প্রয়োজন এবং আগাছা বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার পর পুনরায় চাষ দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হয়৷
• হাতে তোলা৷
• ফুল ও ফল উৎপাদনের পূর্বে নিড়ানি৷
• শস্য পর্যায় অবলম্বন৷
কাঁটানটে
বাড়ির আশপাশে, রাস্তা ও জমিতে এই আগাছার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি৷ চারা অবস্থায় নিড়ানি দিয়ে তুলে নিলে এই আগাছা তেমন ছড়াতে পারে না৷ বীজ পরিপক্ব হওয়ার পর কয়েক মাস সুপ্ত থেকে শীতের শুরুতে পুনরায় বীজ অঙ্কুরিত হয়৷
প্রধানত মার্চ-এপ্রিল মাসে এতে ফুল দেখা যায় ও জুন থেকে জুলাই মাসে বীজ পরিপক্ব হয়৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: জমি চাষ, কোদলানো, নিড়ানি৷
নটে শাক
গ্রীষ্মের প্রারম্ভে এই আগাছা জন্মাতে দেখা যায়৷ বর্ষাকালে ফুল আসে এবং বীজ পরিপক্বতা লাভ করে৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে সাধারণত খরিফ শস্যের মাঠে অনেক জন্মাতে দেখা যায়৷
দমন পদ্ধতি: কাঁটানটের মতো এটা এতো বিঘ্ন সৃষ্টি করে না, কারণ একে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷
বন বেগুন
এ আগাছা মাঠ, পতিত জমি, বাড়ির আঙিনা ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে জন্মাতে দেখা যায়৷ বসন্তকালে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে অক্টোবর মাসের মধ্যে পুনরায় পরিপক্ব বীজ উৎপাদন করে৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: কোদলানো ও হাতে তোলা পদ্ধতিতে এই আগাছা দমন করা সহজ৷
প্রেম কাঁটা
প্রায় সারা বছরেই জন্মাতে দেখা যায়৷ মধ্য-উঁচু ও উঁচু জমি, বাড়ির আঙিনা, রাস্তার পাশে অসংখ্য প্রেমকাটা গাছ জন্মায়৷ ফুল উৎপাদন ও বীজ পরিপক্ব হওয়ার প্রধান সময়সীমা এপ্রিল থেকে আগস্ট৷
বংশ বিস্তার: বীজ ও লতানো কাণ্ড বা গোড়ার মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে থাকে৷
দমন পদ্ধতি: কোদলানো, গভীর লাঙল চাষ ও আগাছানাশক দিয়ে দমন করা যায়৷
ঘাঘড়া
প্রায় সব স্থানেই বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে এই আগাছা বেশি দেখা যায়৷ মধ্যম উঁচু জমি থেকে শুরু করে নিচু জমিতেই জন্মায়৷ এপ্রিল থেকে মে মাসে বীজ শীতের প্রারম্ভে পুনরায় অঙ্কুরিত হয়ে গাছ উৎপাদন করে৷
বংশ বিস্তার: বীজের সাহায্যে বংশবিস্তার করে৷ পশুর দেহ, লেজ ইত্যাদিতে আটকে থেকে এই বীজ এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে৷
দমন পদ্ধতি: জমি চাষ, কোদলানো ও হাতে তোলা৷
শিয়াল কাঁটা
ইক্ষু ও ভুট্টার সাথে জন্মাতে দেখা যায়৷ শীতের প্রারম্ভে এদের চারা জন্মাতে দেখা যায়৷ বসন্তে এই গাছে ফুল ফুটে এবং বীজ পরিপক্ব হয়৷
বংশ বিস্তার: বীজের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: কোদলানো ও আগাছানাশক দিয়ে দমন করা যায়৷
গালিচা আগাছা
পতিত আঙিনা, বেলে মাটি, রাস্তাপার্শ্বে, শাকসবজির জমি ইত্যাদিতে প্রচুর কার্পেট আগাছা জন্মে৷ বাংলাদেশে রবি ঋতুতে এই আগাছা বেশি জন্মাতে দেখা যায়৷ ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বীজ অঙ্কুরিত হয়৷ মার্চ-এপ্রিল মাসে বীজে ফুল আসতে শুরু করে এবং মে-জুন মাসে বীজ পরিপক্ব হয়৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: হাতে তোলা, নিড়ানি ও কোদলানো পদ্ধতির সাহায্যে দমন করা যায়৷ শস্য জমিতে এই আগাছা জন্মালে ভালোভাবে লাঙল চাষ ও মই (ফুল ও বীজ উৎপাদনের পূর্বে) এগুলো দমনের জন্য যথেষ্ট কার্যকর হয়৷
কাশ
সারা বছরই এ আগাছা জন্মাতে দেখা যায়৷ উলু আগাছার অনুরূপ, চাষ জমির চারপাশে বেশি জন্ম৷
বংশ বিস্তার: মূল কন্দের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে৷ কাশ গাছে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ফুল আসে৷ চর অঞ্চলে খুব বেশি দেখা যায়৷
দমন পদ্ধতি: গভীর চাষ ও কোদলানোর মাধ্যমে কাশ দমন করা যায়৷
বন সরিষা
পতিত জায়গা, দানাশস্য, জমি, রবিশস্য ইত্যাদিতে প্রচুর বন সরিষা জন্মাতে দেখা যায়৷ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এই আগাছার প্রকোপ কিছুটা বেশি৷ শীতকালে বীজ অঙ্কুরিত হয়ে মে-জুন মাস পর্যন্ত গাছ দেখা যায়৷ এপ্রিল মাস থেকে বীজ পরিপক্ব হতে শুরু করে৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে৷ প্রতি ফলে অসংখ্য বীজ থাকে৷
দমন পদ্ধতি: হাতে তোলা, নিড়ানো, কোদলানো ইত্যাদির মাধ্যমে বন সরিষা আগাছা দমন করা যায়৷ তবে এসব যাবতীয় পদ্ধতি অবশ্যই ফুল ফোটা বা বীজ পরিপক্ব হওয়ার পূর্বে সম্পাদন করতে হয়৷
বন মসুর
এটি একটি রবি আগাছা৷ সাধারণত ডাল ও শীতকালীন সবজির জমিতে জন্মাতে দেখা যায়৷ নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এই আগাছার বীজগুলো অঙ্কুরিত হতে দেখা যায়৷ জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল ধরে৷ এপ্রিল-মে মাসে বীজ পরিপক্ব হয়৷
বংশ বিস্তার: বীজের সাহায্যে বংশ বিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: সময় মতো নিড়ানি দিয়ে এ আগাছা সহজেই দমন করা যায়৷
চাপড়া
রবি ও খরিফ উভয় ঋতুতেই এই আগাছা পর্যাপ্ত পরিমাণে জন্মায়৷ এছাড়া রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ ও বাড়ির পতিত আঙিনায় প্রচুর চাপড়া জন্মায়৷
ফুল উৎপাদন ও বীজ পরিপক্বতার প্রধান সময় মে থেকে জুলাই৷ অন্যান্য সময়েও গাছে ফুল থাকতে পারে তবে তার পরিমাণ কম৷
বংশ বিস্তার: সাধারণ বীজের সাহায্যে বংশবিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: দমনের জন্য গাছ ফুল বা ফল উৎপাদনের পূর্বে চাষ দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে বা হাতে টেনে তুলতে হয়৷ এজন্য নিড়ানি, কোদলানো ও লাঙল চাষ যথেষ্ট উপকারি৷ আগাছানাশক প্রয়োগের মাধ্যমেও সহজেই চাপড়া আগাছা দমন করা যায়৷ রবি ঋতুতে সবজির জমিতে নিড়ানি দেয়ার সময় চাপড়ার ছোট ছোট চারাগাছ ভালো করে তুলে নিলে পরবর্তী মৌসুমে এর আক্রমণ অনেক কমে যায়৷
ঘৃত-কাঞ্চন বা নুনিয়া
শীতকালীন ও উঁচু জমির অন্যান্য শস্যের জন্য ঘৃত-কাঞ্চন একটি গুরুত্বপূর্ণ আগাছা৷ বাংলাদেশে অক্টোবর-নভেম্বর মাস থেকে বীজ অঙ্কুরিত হতে শুরু করে মে-জুন পর্যন্ত জন্মাতে দেখা যায়৷ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকেই বীজ পরিপক্ব হতে শুরু করে৷ চারাগাছের বৃদ্ধি হার খুবই বেশি৷
বংশ বিস্তার: বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে৷
দমন পদ্ধতি: এ আগাছ দমনের জন্য লাঙল চাষ, নিড়ানি ও কোদলানো খুবই উপযুক্ত৷ ফুল ফোটা বা বীজ পরিপক্ব হওয়ার পূর্বে এই আগাছা দূরীভূত করতে পারলে পরবর্তী বছরে এর প্রকোপ অনেকটা কমে যায়৷
পোকার আক্রমণ ও দমন
আশিয়ান মাজরা পোকা
পোকার বর্ণনা :
স্ত্রী পোকা হলুদ থেকে হালকা বাদামি, পাখার বিস্তার হয় ২৭ সেন্টিমিটার পুরুষ পোকা গাঢ় বাদামি রংয়ের, উপরের দিকে চোখা৷
ক্ষতির ধরন:
ভুট্টা রোপণের ৩-৪ সপ্তাহ পর এই পোকার আক্রমণ হয়৷ ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে প্রথমে পাতার কলা বা টিস্যু খায়৷ এরপর এরা গাছের কাণ্ড অথবা মোচা ছিদ্র করে ভেতরের অংশ খায়৷ এরা ভুট্টার কাণ্ড এবং পুষ্পমঞ্জুরি বা মোচাতে সুড়ঙ্গ তৈরি করে৷ এতে গাছের বৃদ্ধি ও মোচা উৎপাদন ব্যাহত হয়৷ যখন এরা কেন্দ্রীয় পাতার গোড়া কিংবা মোচার গোড়া কেটে দেয় তখন গাছটি মারা যায়৷
দমন ব্যবস্থা:
• এ পোকার আক্রমণ হলে জমিতে প্লাবিত সেচ দেওয়া৷
• ফসল কাটার পর অবশিষ্টাংশ পোড়ানো ও জমি চাষ দিয়ে ফেলে রাখা৷
• ভুট্টার ক্ষেত হতে আগাছা ও চারিপাশ হতে বিকল্প পোষক উচ্ছেদ করা৷
• প্যারাথিয়ন, নগস, ফেনিট্রোথিয়ন কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা৷
ভুট্টার মাজরা পোকা
পোকার বর্ণনা:
পূর্ণবয়স্ক মথ হলদে ধূসর, মধ্যম আকৃতির৷
ক্ষতির ধরন:
এ পোকা ধানের মাজরা পোকার মতো ভুট্টা গাছের কাণ্ড ছিদ্র করে ভিতরে প্রবেশ করে ও কেন্দ্রীয় পাতার গোড়া হতে কলা বা টিস্যু খায় ফলে মধ্যের পাতাটি শুকিয়ে যায়, যাকে মরা ডিগ লক্ষণ বলে৷ এছাড়া এরা ভুট্টার মোচা ছিদ্র করে ভেতরের অংশ ও খায়৷
দমন ব্যবস্থা:
• এ পোকার আক্রমণ হলে জমিতে প্লাবিত সেচ দেওয়া৷
• ফসল কাটার পর অবশিষ্টাংশ পোড়ানো ও জমি চাষ দিয়ে ফেলে রাখা৷
• ভুট্টার ক্ষেত হতে আগাছা ও চারিপাশ হতে বিকল্প পোষক উচ্ছেদ করা৷
• প্যারাথিয়ন, নগস, ফেনিট্রোথিয়ন কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা৷
ভুট্টার লেদা পোকা
পোকার বর্ণনা:
মথগুলো বাদামি রংয়ের এবং সামনের প্রত্যেক পাখার মধ্যখানে একটি করে ফোঁটা থাকে৷ পিছনের পাখা সাদাটে৷ পাখার বিস্তার প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ মিলিমিটার৷
ক্ষতির ধরন:
এদের তরুণ কীড়াগুলো পত্রফলক খেয়ে জালিকা করে ফেলে৷ পরবর্তীতে বয়স্ক কীড়া পেটুকের মতো সমস্ত পাতা খেয়ে ফেলে৷ কোনও কোনও সময় সমস্ত ভুট্টার গাছটাই খেয়ে ফেলে৷ এরা সাধারণত রাতে আক্রমণ করে থাকে৷
দমন ব্যবস্থা :
• এ পোকার আক্রমণ হলে জমিতে প্লাবিত সেচ দেওয়া৷
• ফসল কাটার পর অবশিষ্টাংশ পোড়ানো ও জমি চাষ দিয়ে ফেলে রাখা৷
• ভুট্টার ক্ষেত হতে আগাছা ও চারিপাশ হতে বিকল্প পোষক উচ্ছেদ করা৷
• প্যারাথিয়ন, নগস, ফেনিট্রোথিয়ন কীটনাশক অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করা৷
আমেরিকান বোলওয়ার্ম
ক্ষতির ধরন :
এই পোকার কীড়াগুলো ভুট্টার দুধ পাকা ধাপে ভুট্টার মোচা ছিদ্র করে ভেতরে প্রবেশ করে এবং সেখানে খায়৷ ভুট্টার আক্রমণে এই পোকার একমাত্র বৈশিষ্ট্য হলো এরা মোচার সামনের অংশে আক্রমণ করে বা ছিদ্র করে৷
দমন ব্যবস্থা:
• আগাম ভুট্টার চাষ করা৷
• অবিরত ভুট্টার চাষ না করে শস্য পর্যায় অবলম্বন করা৷ তবে শস্য পর্যায়ে উল্লেখিত বিকল্প পোষক অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না৷
• যেহেতু মুককীট অবস্থায় মাটিতে শীতকাল কাটায় তাই ফসল কর্তনের পর জমি চাষ দিয়ে ফেলে রাখতে হবে৷ এতে মুককীট রোদে মারা যাবে অথবা পাখি খেয়ে ফেলবে৷
• এ পোকার আক্রমণ হয়েছে কিনা তার জন্য মাঝে মাঝে ভুট্টার ক্ষেত পরিদর্শন করা উচিত৷ বিশেষত দুধ পাকা ধাপে৷ আক্রমণ হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷
• আলোর ফাঁদ পেতে বয়স্ক মথ ধরে ধ্বংস করা৷
• দুটি রাসুন ভালোভাবে পিষে তার সাথে দুচামচ মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে তাতে ৪ লিটার গরম পানি মিশাতে হবে এবং তীব্রভাবে নাড়তে হবে৷ তারপর সুপারির মতো ছোট এক টুকরা সাবান তাতে গালাতে হবে৷ এই মিশ্রণ ভুট্টার মোচাতে স্প্রে করতে হবে৷
• কীটনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন হলে বাইড্রিন ৮৫ তরল হেক্টর প্রতি ৮০০ মিলিমিটার অথবা লিবাসিড ৫০ তরল বা সুমিথিয়ন ৫০ তরল হেক্টর প্রতি ১.১২ লিটার প্রয়োজনীয় পানি সাথে মিশিয়ে ভুট্টার মোচাতে স্প্রে করতে হবে৷
ভুট্টার জাব পোকা
পোকার বর্ণনা :
ক্ষুদ্র নাশপাতি আকৃতি, পাখাযুক্ত বা বিহীন সবুজাভ বা সবুজাভ নীল৷
ক্ষতির ধরন:
• এরা পাতা, পাতার খোল ও পুষ্পমঞ্জুরিতে কলোনি আকারে অবস্থান করে এবং তা হতে রস চুষে খায়৷ ফলে পাতা কুচকে যায়৷
• জাব পোকার আক্রমণে মধু নিঃসরণের কারণে অধিকাংশ পরাগ-রেণু আটকে গেলে ভুট্টার মোচার সিল্ক বা রেশমি সুতাগুলোতে পরাগ সংযোজনে বিঘ্ন ঘটে এবং মোচায় দানা সৃষ্টি হয় না৷ অর্থাৎ পুষ্পমঞ্জুরি বন্ধ্যা হয়ে যায় তাতে ভুট্টা হয় না৷
• এ পোকার আক্রমণে শুটিমোল্ড ছত্রাকের আক্রমণের ফলে পাতা কালো হয়ে যায়৷ সালোকসংশ্লেষণ ব্যাহত হয়৷ গাছের বৃদ্ধি কমে যায়৷
• এরা সাধারণত তরুণ গাছে আক্রমণ করে৷ দানাশস্যে এরা দশ ধরনের ভাইরাস রোগ ছড়ায়৷
দমন ব্যবস্থা:
• আগাম ফসল রোপণ করা৷
• ভালোভাবে জমি চাষ দেওয়া এবং সার দেওয়া, যাতে গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং দ্রুত পরিপক্বতা আসে৷
• ফসল কাটার পর অবশিষ্টাংশ পোড়ানো৷
• হালকা গরম পানি স্প্রে করা৷
• ক্ষেতের অধিকাংশ জায়গায় শতকরা ৫০ ভাগ ভুট্টা গাছ আক্রান্ত হলে ডাইমথয়েড ৪০ ইসি বা মেটাসিসটক্স-আর ইসি ২ মিলিমিটার কীটনাশক ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে৷ তবে মোচার সিল্কে যে সময় পরাগ সংযোজন হয় সে সময় জমিতে তরল কীটনাশক প্রয়োগ করা উচিত নয়৷
কাটুই পোকা
ক্ষতির ধরন:
কাটুই পোকা-এর আক্রমণে বীজ থেকে ভুট্টার চারা গজানোর পরপরই মাটির কাছাকাছি বা মাটির একটু নিচ থেকে চারার গোড়া কেটে দেয়৷ ফলে জমিতে ভুট্টা গাছের সংখ্যা কমে যায় এবং ফলন ও কমে যায়৷
দমন ব্যবস্থা:
এ পোকা দমনের জন্য বপনের সময় বীজহার বৃদ্ধি করতে হবে এবং ডারসবান ২০ ইসি বা পাইরিফস ২০ ইসি ৫ মিলিমিটার ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে সারিতে লাগানো চারাগুলোর গোড়ায় মাটিতে ২০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত করে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে৷ এতে হেক্টরপ্রতি ৫ লিটার কীটনাশক প্রয়োজন হবে৷
রোগ দমন
ভুট্টার বীজ পচা ও চারা গাছের রোগ
রোগের লক্ষণ:
• বীজ পচন এবং চারা নষ্ট হওয়ার কারণে জমিতে ভুট্টা গাছের সংখ্যা কমে যায়৷
• বীজ ও মাটিবাহিত বিভিন্ন ছত্রাক বীজ পচন, চারা ঝলসানো, গেড়া ও শিকড় পচা রোগ ঘটিয়ে থাকে৷
• জমিতে রসের পরিমাণ যদি বেশি থাকে, মাটির তাপমাত্রা যদি কম হয় তাহলে বপনকৃত বীজে চারা গজাতে এবং চারা বড় হতে অনেক সময় লাগে৷ ফলে বিভিন্ন প্রকার ছত্রাকের আক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়৷
প্রতিকার :
• সুস্থ-সবল, ক্ষতমুক্ত রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম এমন বীজ বপন করতে হয়৷
• উত্তমরূপে জমি তৈরি করে পরিমিত রস ও তাপমাত্রায় মাটিতে বীজ বপন করলে রোগজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়৷
• বিভিন্ন প্রকার ওষুধ, যেমন- থিরাম ও ভিটাভ্যাক্স ০.২৫% এক কেজি বীজের ২.৫ গ্রাম ওষুধ ব্যবহার করে বীজ শোধন করতে হয়৷
ভুট্টা পাতা ঝলসানো রোগ
রোগের লক্ষণ:
• ছত্রাকের আক্রমণে আক্রান্ত গাছের নিচের দিকের পাতায় ডিম্বাকার ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়৷
• পরবর্তীকালে গাছের উপরের অংশে বিস্তার লাভ করে৷
• রোগের প্রকোপ বেশি হলে পাতা আগাম শুকিয়ে যায় ও গাছ মরে যায়৷
• এ রোগের জীবাণু গাছের আক্রান্ত অংশে অনেকদিন বেঁচে থাকে এবং জীবাণুর বীজকণা বা কনিডিয়া বাতাসের সাহায্যে অনেকদূর পর্যন্ত সুস্থ গাছে ছড়াতে পারে৷
• বাতাসে আদ্রতা বেশি হলে এবং ১৮ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় এ রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়৷
ছবি: পাতা ঝলসানো রোগে আক্রান্ত পাতা ও গাছ ছবি সূত্র: কৃষিপ্রযুক্তি হাত বই (এপ্রিল ২০০০), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, বাংলাদেশ
প্রতিকার :
• রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করতে হয়৷ মোহরজাত অপেক্ষাকৃত রোগ প্রতিরোধী৷
• আক্রান্ত ফসলে টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৪%) ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার স্প্রে করতে হয়৷
• ভুট্টা উঠানোর পর আক্রান্ত গাছ জমি থেকে সরিয়ে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হয়৷
ভুট্টার মোচা ও দানা পচা রোগ
রোগের লক্ষণ:
• আক্রান্ত মোচার খোসা ও দানা বিবর্ণ হয়ে যায়, দানা কুঁচকে যায়৷
• অনেক সময় মোচার বিভিন্ন দানার মাঝে বা উপরে ছত্রাকের উপস্থিতি খালি চোখে দেখা যায়৷
• মোচা অবস্থায় আক্রান্ত হলে পুরো মোচাই পঁচে যায়৷
• ভুট্টা গাছে মোচা আসার প্রাথমিককাল থেকে ভুট্টা পাকা পর্যন্ত সময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যদি বেশি থাকে তবে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়৷
• এ রোগের জীবাণু বীজের অথবা আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশে বেঁচে থাকে৷
ছবি: ভুট্টাদানা ও মোচা পচা রোগ
ছবি সূত্র: কৃষিপ্রযুক্তি হাত বই (এপ্রিল ২০০০), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, বাংলাদেশ
প্রতিকার :
• একই জমিতে বার বার ভুট্টা চাষ না করাই ভাল৷
• ভুট্টা পেকে গেলে দেরি না করে তাড়াতাড়ি কেটে ফেলতে হয়৷
• কাটার পর ভুট্টার পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হয়৷
ভুট্টার কাণ্ড পচা রোগ
রোগের লক্ষণ:
• প্রাথমিক লক্ষণ রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর উপর নির্ভর করে কিন্তু সব ক্ষেত্রেই পরিশেষে গাছের কাণ্ড পচে যায়৷
• আমাদের দেশে খরিফ মৌসুমে এ রোগটি বেশি হয়ে থাকে৷
• জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেশি থাকলে এবং পটাশের পরিমাণ কম হলে ছত্রাকঘটিত কাণ্ড পচা রোগ বেশি হয়৷
• শিলা বৃষ্টি অথবা শিকড় ও কাণ্ডে পোকা আক্রমণে পাতা ঝলসানো রোগ বেশি হয়৷
ছবি: ভুট্টার কাণ্ড পচা রোগ
ছবি সূত্র: কৃষিপ্রযুক্তি হাত বই (এপ্রিল ২০০০), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, বাংলাদেশ
প্রতিকার ব্যবস্থা:
• সুস্থ ও উচ্চ মানসম্পন্ন বীজ ব্যবহার করতে হয়৷ বীজ শোধন করা ভাল৷
• সুষম সার ব্যবহার করতে হয়৷ বিশেষ করে নাইট্রোজেন ও পটাশ পরিমিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়৷
• একই জমিতে বার বার ভুট্টা চাষ না করে অন্য ফসলের চাষ করতে হয়৷
• ভুট্টা কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হয়৷
• শিকড় এবং কাণ্ড আক্রমণকারী পোকা দমন করতে হয়৷
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
পরিপক্বতার লক্ষণ :
• দানার জন্য ভুট্টা সংগ্রহের ক্ষেত্রে মোচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলুদ হয়ে এলে সংগ্রহের উপযুক্ত হয়েছে বুঝতে হয়৷
• এ অবস্থায় মোচা থেকে ছাড়ানো বীজের গোড়ায় কালো দাগ দেখা গেলে নিশ্চিতভাবে বোঝা যাবে মোচা সংগ্রহের সময় হয়েছে৷
• শতকরা ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ গাছের মোচা এরকম হলে সেই ক্ষেত থেকে ভুট্টা সংগ্রহ করা যাবে৷
• মোচার মাঝামাঝি অংশ থেকে বড় ও পুষ্ট দানা বীজ সংগ্রহ করতে হয়৷
ভুট্টার মোচা থেকে দানা সংগ্রহ :
ভুট্টা মোচা থেকে দানা সংগ্রহ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ৷ হস্তচালিত ও শক্তিচালিত মাড়াই যন্ত্র দিয়ে মোচা থেকে দানা সংগ্রহ করতে হয়৷ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ক্ষুদ্র চাষীদের উপযোগী করে হস্তচালিত ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র আবিষ্কার করেছে৷ এই যন্ত্র কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের যেকোনো শাখা অফিস থেকে ক্রয় করা যাবে৷
ছবি: শক্তিচালিত ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র্র ছবি: হস্তচালিত ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র্র
ছবি সূত্র : কৃষিপ্রযুক্তি হাত বই (এপ্রিল ২০০০), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, বাংলাদেশ
বীজ সংরক্ষণ:
মোচা সংগ্রহের সময় বীজে সাধারণত রবি ফসলের বেলায় ২৬% থেকে ২৮% এবং খরিফ ফসলের ক্ষেত্রে ২৮% থেকে ৩৫% আদ্রতা থাকে৷ এজন্য বীজ সংরক্ষণের আগে এমনভাবে শুকাতে হয় যেন আদ্রতা ১২% এর বেশি না থাকে৷
শুকানোর পর দাঁত দিয়ে চাপ দিলে “কট” শব্দ করে ভেঙে গেলে বুঝতে হয় দানা ভালোভাবে শুকিয়েছে৷ তারপর বায়ুরোধন পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হয়৷ উন্নত পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করলে ১০ মাস পর্যন্ত অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা শতকরা ৮৬ ভাগের বেশি থাকে৷
নিচে বর্ণিত উন্নত পদ্ধতিতে অর্থাৎ বায়ুরোধক পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হয়।
টিনের পাত্র:
ছবি: ভুট্টা সংগ্রহের টিনের পাত্র
ছবিসূত্র: কৃষিপ্রযুক্তি হাত বই (এপ্রিল ২০০০), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর, বাংলাদেশ
এমএস শিট দিয়ে পাত্র তৈরি করা যায়৷ মুখ বন্ধ করার ঢাকনা এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন তার চারিদিকে সিলিং 'পদার্থ' মিশ্রিত কাদা মাটি দিয়ে বাতাস চলাচল বন্ধ করা যায়৷ ঢাকনায় ২.৫ সে.মি. মাপের এক টুকরো কাঁচ বসানো থাকে৷ এজন্য ঢাকনা না খুলেও ভেতরের বীজের অবস্থা দেখা যায়৷ এই পাত্রের ধারণক্ষমতা ৫ কেজি এবং তৈরি খরচ ৪০ টাকার মতো৷
মাটির পাত্র:
ছবি: ভুট্টা সংগ্রহের মাটির পাত্র
ছবিসূত্র: কৃষিপ্রযুক্তি হাত বই (এপ্রিল ২০০০), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিষ্টিটিউট, গাজীপুর, বাংলাদেশ
বিশেষভাবে তৈরি এ মাটির পাত্রের ভেতরে ০.০৫ মিলিমিটার পুরু পলিথিন ব্যাগ জড়িয়ে দেওয়া হয়৷ এই পলিথিন ব্যাগের মধ্যে ভুট্টা বীজ রেখে মুখ তাপ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়৷ মাটির পাত্রের মুখ এমনভাবে তৈরি যে সিলিং পদার্থ দিয়ে আটকিয়ে বায়ু চলাচল রোধ করা যায়৷ পাত্রের মুখের ঢাকনায় ২.৫ সে.মি. মাপের এক টুকরা কাচ বসানো থাকে যেন ঢাকনা না খুলে ভেতরের বীজ দেখা যায়৷ পাত্রের ধারণক্ষমতা ৭ কেজি এবং মোট তৈরি খরচ ১০ টাকার মতো৷
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS